হলদি নদীতে অগুন্তি শিশুর পা চিরে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। দূরদর্শনের সান্ধ্য মজলিশে গলা চিরে বলা লোকগুলি না মরে আজও হয়ত ফাঁকতালে বেঁচে আছেন। আর্কাইভেও হয়ত থাকবে। জবাবদিহির ফুরসৎ নেই। প্রত্যহ নয়া ক্রাইম, উদ্ভাবনী দুর্নীতিতে ভরিয়ে দেয় প্রিয় মামাটি ও ধম্মো সরকার। নিরীহ ব্যাঙ্গচিত্র ফরোয়ার্ডের জন্য অমানবিক হেনস্হার শিকার হন অধ্যাপক। নয়া ইংরাজী ভোকাবুলারি চালু- ভ্যানিশ মানে মার্ডার। মিডিয়া মেনেছে সরকারী ফতোয়া। বিজ্ঞাপনের খাতিরে তো বটে, শ্রেণী স্বার্থের চোরাস্রোতও ছিল। ১৯৬৯এ যুক্তফ্রন্টের আমলে রবীন্দ্র সরোবরে নৈশ জলসায় তুমুল বিশৃঙ্খলা হয়েছিল। ১৬ই এপ্রিল আনন্দবাজারে মহিলাদের উপর নৃশংস বর্বরোচিত আক্রমণের খবর প্রকাশিত হয়। গাড়ি ভর্তি অন্তর্বাস থেকে লাশের হুজুগে রাষ্ট্রপতি শাসনের সোচ্চার দাবী ওঠে। বিচারপতি শম্ভুচরণ ঘোষের নেতৃত্বে বিচার বিভাগীয় তদন্তে সেই সংবাদপত্রের কোন সাংবাদিক সাক্ষ্য দিতে উপস্হিত হননি। ১৬ই ডিসেম্বর তদন্তের রিপোর্ট প্রকাশিত হলে পত্রিকা নিগ্রহের কাহিনী অবান্তর মেনে নেয়। লেহন ট্র্যাডিশনের শিকড় গভীরে।

২০১০ সালে স্টিফেন কোর্ট অগ্নিকান্ডে দুর্ভাগ্যজনক ভাবে ৪৩ জনের মৃত্যু হয়েছিল। অফিস থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে দ্রুত অকুস্হলে পৌঁছাই এবং মর্মান্তিক ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। তৎকালীন বিরোধী নেত্রী রাতের অন্ধকারে কালো বস্তা ভর্তি মৃতদেহ সরিয়ে ফেলার আজব গুজব মিডিয়ার সহায়তায় প্রচার করেছিলেন, এবং আশেপাশের বহু তথাকথিত শিক্ষিত মানুষও অন্ধের মত বিশ্বাস করছেন। তখন বুঝি ২০০৬ বা ২০১০ সালের চিত্র যদি এমন করুণ হয়, ১৯৬৯এর গুজব ছড়ানো সংবাদ মাধ্যমের কাছে কত সহজ ছিল। ১৯৭১এর ১৬ই ফেব্রুয়ারী সোনারপুরের বামপন্হী নেতা নির্মল চ্যাটার্জীকে কংগ্রেসী গণা ও তার লুম্পেন বাহিনী খুন করে তাঁর স্ত্রীকেও ধর্ষণ করে। মুম্বাইয়ের ইকনমিক ও পলিটিকাল উইকলিতে ঘটনার উল্লেখ থাকলেও স্হানীয় সংবাদপত্র নির্মলবাবুকে কংগ্রেসী বলে চিহ্নিত করে দায় সারে। রাজ্যপাল ছিলেন কংগ্রেসের ঢোলের বায়া। ২০শে ফেব্রুয়ারী, ১৯৭১এ হেমন্ত বসুকে হত্যা করে বাতাসে গন্ধ শুঁকে মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থ শঙ্কার রায় ও তল্পিবাহক সংবাদ মাধ্যম সিপিএমকে দায়ী করে দেন। আজও হত্যাকারী আজানা।

তাপসী মালিকের হত্যাকারী কে আমরা জানতে পেরেছি? অথচ প্রতিদিন সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বালিয়ে মিডিয়া ট্রায়াল হয়েছে। সিঙ্গুরের নির্মিয়মাণ কারখানা ধ্বংস করে দিল লুঠেরারা। এরকম বহু হত্যা মিডিয়ার ভ্রান্ত প্রচারের আবডালে বিচারের সুরাহা পায়নি। ১৯৭১র হেমন্ত বসু হোক বা ২০১৬র তাপসী মালিক- এঁদের ঘাতক একই। হয়ত প্রজন্ম বদল হতে পারে, দলের সাইনবোর্ড বদলে যেতে পারে। ৬ বছর সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায় মুখ্যমন্ত্রীত্ব করা সত্ত্বেও কেন হত্যাকারী ধরা পড়ল না? তাপসী মালিকের বাবা মনোরঞ্জন মালিকের আফশোস তাঁর মেয়ের খুনীরা বর্তমানে রাজনৈতিক ক্ষমতা ভোগ করছে। এমনকি ১৯৭০ সালে পাটনা রেল স্টেশনে জ্যোতি বসুর উপর আনন্দমার্গীদের গুলি চালনাতেও নির্লজ্জ সংবাদ মাধ্যম সিপিএমকে দায়ী করতে পিছপা হয়নি। ১৯৭৭ সালে বামফ্রন্ট সরকার গঠিত হবার পর ওডিশার দন্ডকারণ্য ও মধ্য প্রদেশ থেকে বুভুক্ষু শর‍ণার্থীদের সুন্দরবনের কুমীরমারী অঞ্চলের ব্যাঘ্র প্রকল্পের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় বসতি স্হাপনের জন্য উসকে আনা হয়। ২০০৬র নন্দীগ্রামে মাওবাদীদের ঘাঁটি গাড়ার সাথে মিল খুঁজে পাবেন।

১লা ফেব্রুয়ারী, ১৯৭৯তে আনন্দবাজার পত্রিকায় লেখা হয়, মরিচঝাঁপিতে গুলি। নিহত ছয়, আহত পাঁচ। অথচ গল্প ছড়িয়ে যায়, হাজার হাজার মৃতদেহ জঙ্গলে বা মাঝ সমুদ্রে ফেলে আসা হয়। তারপর থেকেই নাকি সুন্দরবনের বাঘ, কুমীর মানুষখেকো হয়েছে। বেঁচে থাকা মানুষরা সেদিন প্রশ্ন করেনি, স্বাধীনতার তিরিশ বছর পরেও কংগ্রেসী আমলে দন্ডকারণ্যে কেন শরণার্থীরা মানুষের অধিকার পায়নি? কেন তাঁদের প্রাণ হাতে করে সুন্দরবনের নোনা দ্বীপে দু মুঠো ভাতের সন্ধানে আসতে হয়েছিল? এখানেও হলদি নদীর মত অলীক গল্পের ফুলঝুরি। এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, গুলি চালনার দায় অধিকারী পরিবারের। অধিকারী পরিবারের পেছনে শক্তি কে ছিলেন? কোথায় ধর্ষণ করে পেট চিরে বাচ্চা নদীতে ফেলে দেওয়া মৃতদের তালিকা? ১৯৭৯ সালে মরিচঝাঁপিতে দুই জন মানুষের মত্যু দুর্ভাগ্যজনক। সাংবাদিক, ভুঁইফোর তথাকথিত সুশীলদের হাস্যকর বেঢপ সংখ্যার জাগলারি শুরু। ২০১১ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় এসেছেন। মরিচঝাঁপির তদন্ত হবে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সেদিনের মিডিয়া বা আজকের মমতারা চুপ।

মিডিয়া বাম-বিরোধী প্রলাপ পেলে পাগলের মত উন্মত্ত হয়ে যায়, যার খেসারত বাঙালিকে বারবার দিতে হয়েছে। রিজওয়ানুরকে কে হত্যা করল, সরকার, সংবাদ মাধ্যম থেকে সুশীল সবজান্তাদের কাছে আজও  নিরর্থক। সাম্প্রদায়িক রাজনীতির আলোড়নটাই কেবল অর্থবহ ছিল। ১৯৭০ সালের ১৬ই মার্চ দ্বিতীয় যুক্তফ্রন্ট সরকার ভেঙে দেবার পরের দিন দুটি ঘটনা ঘটল। কেশরাম রেয়ন কারখানার নিরাপত্তা রক্ষী, পুলিশ, সিআরপিএফের গুলিতে শ্রমিক নেতা ননী দেবনাথ সহ পাঁচ জনকে খুন করা হয়। দ্বিতীয় ঘটনাটা বর্ধমানে। বামেদের ডাকা বন্ধ প্রতিহত করতে গিয়ে সঙ্ঘর্ষে মৃত্যু হয় বিচারাধীন অপরাধী কংগ্রেসী গুন্ডা প্রণব ও মলয় সাঁইয়ের। প্রথম ঘটনাটি সংবাদপত্র না ছাপলেও দ্বিতীয় ঘটনা বহুবর্ণে অতিরঞ্জনে সুসজ্জিত করে পরিবেষিত হয়। নন্দীগ্রামের গুলিচালনায় গোপালকৃষ্ণ গান্ধীর মেরুদন্ড লিক করেছিল, সাঁইবাড়ির ঘটনায় শান্তি স্বরূপ ধাওয়ানের শিরদাঁড়ায় সেরূপ লিক হয়। সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায় বা তাঁর সুযোগ্যা শিষ্যা মমতা বন্দোপাধ্যায় ক্ষমতায় থাকলেও চটুল গল্পকথা ছাড়া কমিশন সত্য প্রকাশিত করার চেষ্টা করেনি।

আজও গণমাধ্যমগুলি ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয়নি। নির্লজ্জ চাটুকারিতার সময় খেয়াল রাখে না ইতিহাসের মহাফেজখানায় তাদের দুর্নীতিও জমা হচ্ছে। ১৯৭১ সালের ১৩ অগাষ্ট কাশীপুর গণহত্যা কংশাল রাজনীতির বধ্যভূমি। তিপ্পান্ন বছরে শতাধিক তরুণের গণহত্যার শাস্তি হয়নি। ১৫ই অগাষ্ট, ১৯৭১, যুগান্তর পত্রিকায় বাংলার তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায়ের ঔদ্ধত্য, আগে দেখতে হবে, যারা মারা গেছে, তারা শান্তিপ্রিয় ছিল কিনা! কারণ, আগের দিন গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জনৈক কংগ্রেসী নেতা খুন হন। আজকে তৃণমূল সেই খুনীদের বেঁচে থাকা ছাঁটমাল বা বংশধর। জরুরী অবস্হার দিনগুলিতে কংগ্রেস সরকার সংবাদ পত্রের স্বাধীনতা হরণ করেছিল। তথ্যমন্ত্রী ছিলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। তিনি পরবর্তীকালে তরমুজ উপাধি গ্রহণ করে কলকাতার মেয়র হয়েছিলেন। সিঙ্গারা সহযোগে নারদ ভোজনের তথ্যচিত্র আছে। মিডিয়া অপ্রয়োজনীয় বেশী ফালতু মূল্য দিয়েছে এঁদের। মমতা কঠোর হাতে সুবোতো-সোমেন-পিয়ো-গণিদের পদানত করে বিপুল সাম্রাজ্য বিস্তার করেন। সারদা-নারদে গান স্যালুট দিয়ে দিয়েছেন।

বাংলায় সংবাদ মাধ্যমের যদি একটি নিষ্ঠা থাকে, তা বাম-বিরোধিতায়। তেমনই ১৯৮২ সালের ৩০শে এপ্রিল নির্বাচনের ঠিক প্রাক্কালে বিজনসেতুতে ১৭জন আনন্দমার্গীর হত্যা অনাকাঙ্খিত ঘটনা। তখন থেকে বারবার ফাইল খোলা হলেও আজও খুনীদের সুনির্দিষ্ট ভাবে চিহ্নিত করা যায়নি। কুৎসার জন্য কেন আনন্দমার্গীদের বেছে নেওয়া হল? ১৯৬৭ সালে পুরুলিয়ায় পাঁচ জন বামপন্হীকে হত্যার দায় ছিল মার্গীদের উপর। এমনকি আশ্রমের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের তথ্যও জনশ্রুতিতে আছে। তদন্ত শেষ হওয়া বামপন্হীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সেই সুযোগে কংগ্রেস, নব গঠিত তৃণমূল, প্রশাসনের একাংশ, কিছু সুবিধাভোগী তথাকথিত সুশীল এবং মুখোশধারী শ্রেণীবন্ধু সাংবাদিকদের প্রয়াসে ধানতলা, বানতলার বাগানে গুজবের ফুল ফুটতে শুরু করে। সরকার ও বামপন্হী দলগুলি কঠোর হাতে মোকাবিলা করতে অনেকাংশে ব্যর্থ। ১৯৮৪ সালের ১১ই মার্চ লরেটো স্কুরে ছাত্রী মধুমিতা মিত্রের মৃত্যুতেও বাম ছাত্র সংগঠনকে বাজারী পত্রিকাগুলি দায়ী করলেও প্রমাণিত হয় ছাত্র পরিষদ কর্মী মোহনলাল দাস ওরফে মনা অভিযুক্ত ছিল।

২০১০সালের ২৮শে মে জ্ঞানেশ্বরী রেল দুর্ঘটনায় ১৭০জন অসহায় মানুষের মৃত্যু ও ১৫০জনের বেশী আহত হন। তখন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেবাদাসদের ভোগসুখের নিমিত্তে বিভিন্ন কমিটি ছিল। তেমন এক সদস্য ছিলেন প্রাক্তন নীতিহীন আমলা দেবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি সিবিআই তদন্তের পূর্বেই পরিকল্পিত ভাবে সিপিএমকে দোষী সাব্যস্ত করে বক্তব্য রাখলেন এবং মিডিয়া তাঁর বক্তব্য ফলাও করে প্রচার করে। দায়িত্বজ্ঞানহীন লোকটি বোধহয় এখনও জীবিত। উপহার স্বরূপ রাজ্যসভার সাংসদের টিকিট পান। এই লোভী সুবিধাভোগী লোকগুলিই ধানতলা-বানতলা-মরিচঝাঁপি-সাঁইবাড়ির ডাইনীর গল্পবলা ঠাকুমা। সে বছর ১৯শে জুলাই সাঁইথিয়া রেল দুর্ঘটনায় ৮৯ জন যাত্রীর মৃত্যুর খবরে তৃণমূল নেতা অশোক দেব দাবী করেন, রেলমন্ত্রী মমতার সভা বাঞ্চাল করতে সিপিএম দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে। যথারীতি কাহিনীকে পল্লবিত করার দায়িত্ব পায় সংবাদ মাধ্যম। তখন কলকাতায় বসে রেলমন্ত্রী তাঁর দপ্তর চালাতেন। ১০মাসে ১৪টি রেল দুর্ঘটনা ঘটেছিল ভারতবর্ষে। আজ তাঁরা বেড়াল তপস্বী হয়ে বসে আছেন।

পশ্চিমবঙ্গে ৩৪ বছর বাম শাসন থাকলে, ৪৩ বছর ছিল মাদার কংগ্রেস ও তৃণমূল কংগ্রেসের শাসনকাল। এই ৩৪ বছরের ২৭ বছর যখনই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সলতেতে আগুন দিয়েছেন, তখন বিস্ফোরণের মশলা জুগিয়েছে সংবাদ মাধ্যম। অবশ্যই কেন্দ্রে সহযোগী সরকারের মদত উপভোগ করেছেন। রাজনাথ সিংএর টাটা বিতারণ থেকে নরেন্দ্র মোদীর দুর্নীতির তদন্ত স্তব্ধ করা। এউপিএ হোক বা এনডিএ। ১৯৯৩ সালের ৭ই জানুয়ারী ধর্ষণের অভিযোগ তুলে নদীয়ার দীপালি বসাক ও তাঁর মা ফেলানি বসাককে নিয়ে পূর্ব-নির্ধারিত কর্মসূচী ছাড়াই রাইটার্সে হাঙ্গামা বাঁধিয়ে দেন তৎকালীন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শাসক দলের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে আত্মহারা মিডিয়াকুল প্রচারে ত্রুটি রাখেনি। শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে পৌরসভায় হামলায় ৩৬ জন আহত, ব্যাঙ্কশাল কোর্টে বন্দী ছিনিয়ে নেওয়া থেকে বারুদে আগুন দিতে থাকে সংবাদ মাধ্যম। তারপর সংগঠিত হয় ২১ শে জুলাই, ১৯৯৩। আজও তৃণমূল সমর্থকরা ডিম্ভাত পাগলু দিবস পালন করেন। মিডিয়ার বিস্মৃতির অন্তরালে চলে গেছেন মৃতা দিপালীরা।

ভারতবর্ষের সংবাদমাধ্যম গুণমানে ১৬১টি দেশের মধ্যে ১৫০তম। খবর ও সত্যের জন্য যাঁদের দিকে জনগন তাকিয়ে থাকেন, তাঁরা বিক্রীত ও বিকৃত। শ্রেণীবন্ধুর স্বার্থে আজ কেউ গোদি মিডিয়া কেউ দিদি মিডিয়া। ১৯৯৩ সালে কংগ্রেস কর্মী উৎপল ভৌমিক ও দেবু ঘোষকে খুনের অপরাধে মমতার অনুগামী বিনোদানন্দ ব্যানার্জীকে বহিষ্কার করেন কংগ্রেস সভাপতি সৌমেন মিত্র। পরে সৌমেন মিত্র ও বিনোদানন্দ মহানন্দে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে তৃণমূল করেছেন। জটিল এঁদের চলন কাহিনী। ১৯৯৮ সালে গোলপার্কের কাছে বেদী ভবনে তান্ডব নেচেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখে চলমান ইংরাজীর ফোয়ারা- They cannot give hand on me. আজ সেখানে বৈশাখীর শোভন নৃত্য তাতা থৈথৈ। যে ঘটনা নিয়ে মিডিয়া ব্যবসা করে, সেই ঘটনাই আস্তাকুঁড়ে ছুঁড়ে ফেলতে দ্বিধা বোধ করে না। সুব্রত নাম দিয়েছিলেন, বেদের মেয়ে জোসনা। বলেছিলেন, বাজার কর ঘুরে, মমতার থেকে দূরে। সেই নারদবীরকে মমতা গানস্যালুট দিয়েছেন। অনুঘটক সুশীল ও মিডিয়া সহ চরিত্রগুলি অপরিসীম দুর্ভাগ্যের ঘূর্ণাবর্তে বাংলাকে ডুবিয়েছে।

১৯৯৬ সালে গোপালনগরে প্রকাশ্য দিবালোকে গলায় ফাঁস লাগানোর গল্প দিয়ে শুরু। মানুষ যত বিশ্বাস করেছে, মিডিয়া, ভাড়াটে সুশীল ও লুম্পেন সমাজ সব গরুকে গাছে তুলেছে। এই রচনার  দ্বিতীয় পর্বে নারীর সম্ভ্রমকে ব্যবহার করার ঐতিহাসিক চম্পলা সর্দারের কাহিনী (১৯৯৮) বিবৃত হয়েছে। সে বছর সুজাতা দাসের ধর্ষণ, সাতগাছিয়ায় বাবলু দলুইকে জ্যান্ত কৈ মাছ খাওয়ানো, বিকাশ বসুর হত্যার কাহিনী থেকে ২০০১এর দাসপুরে গৌড় খাঁড়ার জিভ কাটার রটনার নানা কান্ড। অগ্নিকন্যার আক্রান্ত হওয়া ছিল হরবখৎ। কলকাতার সুশীলদের দৌলতে ছোট আঙারিয়ার মত গ্রামে জনযুদ্ধ যুদ্ধের প্রস্তুতিতে বিস্ফোরকের গুদাম করেছিল। এঁদের দৌরাত্ম এতটাই বেশী ছিল যে বামামলেও সোলকু সোরেনের সৎকার করা যায়নি। ২০০৭ সালে রিজওয়ানুরের আত্মহত্যা বাংলার মিডিয়ার মহোৎসব ছিল। খেজুরী, সোনাচূড়া প্রকৃতপক্ষে সংবিধানের বাইরে স্বাধীন ভূমি হয়ে গিয়েছিল দুষ্কৃতিদের। সেই কিষেণজীকে পাপের খেসারত দিতে হয় তপ্ত সীসা বুকে ধারণ করে। বাংলার সংবাদ মাধ্যম অধঃপতিত। ইউটিউব ধীরে উতখাৎ করছে পাপীদের।