নতুন রূপে এন ডি এ সরকারের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ২৩।৭।২৪ তারিখে,২০২৪ – ২৫ এর বাজেট পেশ করেছেন। এই বাজেটের অভিমুখ যা ,তাতে দেখা যাচ্ছে যে ,আমাদের দেশে ধনী আরো ধনী হবে, গরিব আরো গরীব হবে। আর অন্নদাতা কৃষকের হাতে কিছুই থাকবে না।বৈষম্য আরো বাড়বে। কৃষি ও কৃষকের চরিত্র বদলে দেওয়া হচ্ছে।চরম খাদ্য সংকটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে আমাদের দেশ। বৈষম্য বাড়বে, বেকারত্ব বাড়বে, কৃষকদের আত্মহত্যা বাড়বে,আর ক্রোনি (স্বজনতোষী পুঁজি)পুঁজির পাহাড় কয়েকজন পুঁজিপতির করায়ত্ব হবে রাষ্ট্রেরই সাহায্যে ।” উন্নত ও উন্নয়নশীল সব দেশেই দ্রুত বাড়ছে আর্থিক বৈষম্য”– এই রিপোর্ট– দশ বছর আগে জানা গেছে “অক্সফ্যাম” -এর রিপোর্টে।**২১ -০১-২০১৪, আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত অক্সফ্যাম রিপোর্ট** -“-দুনিয়ার অর্ধেক মানুষের সমান টাকা ৮৫ জন ধনীর হাতে। *ধনকুবেরের তালিকায় প্রথম ৮৫ জনের হাতেই “অর্ধেক পৃথিবী”*। দাভোগে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের সম্মেলন শুরুর মুখেই, আর্থিক বৈষম্যের এই ভয়াবহ ছবি তুলে ধরেছে আন্তর্জাতিক উন্নয়নমূলক গোষ্ঠী “অক্সফ্যাম”।

২০১৪ সালে আর এস এস পরিচালিত বিজেপি আমদের দেশে ক্ষমতায় আসে। দেশের প্রধানমন্ত্রী হন নরেন্দ্র মোদী।তার পর থেকেই আমাদের দেশের কর্পোরেটমুখী অর্থনীতি ঘোড়ার মত ছুটেছে। তারই প্রতিফলন এ বছরের বাজেট। নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসার পর ,বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্গে আমাদের দেশের অর্থনীতিও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে এবং আর্থিক বৈষম্য আরো বেড়েছে । বেড়েছে বেকারত্ব, মুদ্রাস্ফীতি, ক্ষুধা, অপুষ্টি, কৃষকের আত্মহত্যা।অক্সফ্যাম-এর সমীক্ষা দেখিয়েছে :- “আয়ের নিরিখে বিশ্বের ৭০০ কোটি মানুষকে সমান দু’ভাগে ভেঙেছে এই সমীক্ষা। নীচের ৩৫০ কোটি জনের হাতে যে পরিমাণ মোট টাকাপয়সা , সম্পদ রয়েছে, তার সমপরিমাণ অর্থ ভোগ করছেন বিশ্বের প্রথম ৮৫ জন ধনকুবের”। অক্সফ্যামের রিপোর্টে জানা যায় — উন্নত ও উন্নয়নশীল, সব দেশেই দ্রুত বাড়ছে আর্থিক বৈষম্য। যে ত্রিশটি দেশের তথ্য তারা সংগ্রহ করেছে তার ২৯ টিতেই ১৯৭০ সালের শেষ থেকে ধনীদের করের হার ক্রমাগত কমেছে।, রোজগার বেশি, আর কর কম – রাজনৈতিক ক্ষমতার সাহায্য নিয়ে সম্পদ বেড়েছে।

অক্সফ্যামের মতে এর অন্যতম প্রমাণ ভারত। ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, গত দশকে ভারতে কোটিপতির সংখ্যা বেড়েছে 10 গুণ। এর জন্য অনুন্নত কর কাঠামো এবং সরকারের থেকে ধনীদের অন্যায় সুবিধা পাওয়াকেই দায়ী করেছে তাঁরা। তাঁদের দাবি, যেভাবে ধনী ও দরিদ্রের দূরত্ব বেড়ে চলেছে, তাতে আগামী দিনে এক মারাত্মক সামাজিক অশান্তির মুখে পড়তে পারে সারা বিশ্ব ।*কারণ তরুণ প্রজন্মের এক বড় অংশের কাছে না থাকবে চাকরি ,না থাকবে চাকরি পাওয়ার দক্ষতা*।দশ বছর আগে, অক্সফ্যাম যা বলেছিল তা আজ প্রায় মিলে যাচ্ছে। এন ডি এ সরকারের ২৩-৭-২০২৪ তারিখে ২০২৪ -২৫ বর্ষের পেশ করা বাজেটে তারই প্রতিফলন।সেই একই চেনা ছকে মোদি সরকারের বাজেট ।স্থায়ী চাকরির কোন দিশা না দেখিয়ে পাঁচ হাজার টাকা করে ইন্টার্নশিপ দিয়ে বেকারত্ব ঘোচানোর স্বপ্ন ফেরি করছে নরেন্দ্র মোদী।তাও আবার সেটা দেবে বেসরকারি কোম্পানিগুলি। একদিকে সম্পদশালীদের ট্যাক্সের বোঝা কমবে আর সাধারণ মানুষের ঘাড়ে ট্যাক্সের বোঝা আরো বাড়বে।জব কার্ডের কাজের টাকার বরাদ্দ বাড়ানো হয়নি। রান্নার গ্যাসের ভর্তুকি গত বছর ছিল ১২,২৪০ কোটি টাকা।এ বছর কমে হল ১১,৯২৫ কোটি টাকা। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতেও বরাদ্দ বাড়েনি।সারের ভর্তুকিতে কোপ মেরেছে নির্মলা সীতারামন। সারের ক্ষেত্রে গত বছর যা বরাদ্দ ছিল এ বছর তা আরো কমিয়ে দেওয়া হলো। গত বছর ১,৮৮,৮৯৪ কোটি টাকা কমিয়ে এ বছর বরাদ্দ হল –১,৬৪,১৫০.৮১ কোটি টাকা। খাদ্য ও গণবন্টন –বরাদ্দ -গত বছর যা ছিল তা থেকে এই বাজেটে কমে গেল -৭,০৮২ টাকা।এই খাতে ধরা হয়েছে ২,১৩,০১৯.৭৫ কোটি টাকা।সময়মত সব ফসলে সেচ দিতে হয়। কৃষকদের পাশে থাকতে হয় সরকারকে। এই সরকার কৃষকদের ভাতে মারতে চাইছে। সেজন্য সেচ খাতে ২৪,৮৯৪ কোটি টাকা ভর্তুকি কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।তার উপর আছে কৃষকদের ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য নির্ধারণ। কৃষক আন্দোলনের সময় নরেন্দ্র মোদি ফসলের এম এস পি সম্পর্কে যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সেই প্রতিশ্রুতি রাখেনি।

সবটাই মিথ্যাচার আর প্রতারণা করা হয়েছে কৃষকদের সাথে। ডক্টর স্বামীনাথন কৃষি কমিশনের সুপারিশও এই সরকার মানলো না। ভূস্বামী ও একচেটিয়া পুঁজিপতিদের স্বার্থরক্ষার নীতির সুবাদে দেশের অর্থনীতির পঙ্গুত্ব একদিন গোটা আর্থিক ব্যবস্থাকে গ্রাস করে দেশকে এক ভয়ানক পরিণতির দিকে নিয়ে যাবে। এ কোন অর্থনীতি ! যেখানে দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি কৃষি ও কৃষক, সেই কৃষকদের প্রতি বঞ্চনা আর অবহেলার চরম নিদর্শন এই বাজেট ।কৃষকদের অন্যতম দাবি– তাদের উৎপাদিত ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য নির্ধারণ সহ কৃষি কাজে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আরো সুলভে কৃষককে দেওয়া । কৃষককে অল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করে দেওয়া, ফসলের ক্ষতি হলে সেই ফসলের ক্ষতিপূরণ দেওয়া। মৌজা ভিত্তিক শস্য বীমা চালু করা। এসব কিছুই করেনি কেন্দ্রের মোদি সরকার।উৎপাদনশীলতা যেমন বাড়ানোর দরকার তেমনি কৃষকদের নানান ভাবে সাহায্য করা এটাও সরকারের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। সব কালচারের মূল কালচার এগ্রিকালচারকে শেষ করে দেশের অর্থনীতি কখনো দিশালাভ করতে পারে না।তাই দেশের কৃষি,কৃষক,ও শ্রমজীবী মানুষকে বাঁচাতে এই বাজেটের বিরুদ্ধে সংগঠিত আন্দোলন গড়ে তোলা দরকার ।মৌলিক চাহিদা ও সমস্যা সমাধানে অন্যান্য দেশের সরকার যেসব সুবিধা দেয়, আমাদের দেশের সরকার সেই সুবিধা দেবে না কেন? প্রশ্ন করুন আর প্রতিবাদে সোচ্চার হোন।আর এই কাজ বামপন্থী ও গণতান্ত্রিক মানুষদেরই করতে হবে।(তথ্য সংগৃহীত)২৪।৮।২৪