বঙ্গমিডিয়ার রঙ্গতামাশায় কিংবদন্তী ঘটনার ঘনঘটা। রবীন্দ্র সরোবরে জলসা (১৯৬৯), কাশীপুর গণহত্যা, বামনেতা নির্মল চ্যাটার্জী বা হেমন্ত বসু খুন (১৯৭১), ১৯৭২এর বিখ্যাত রিগিং সম্পর্কে মিডিয়ার তৎকালীন এক তরফা অপপ্রচার তাপসী মালিক খুন, নন্দীগ্রামে শিশু হত্যার গুজব (২০০৬), স্টিফেন কোর্ট অগ্নিকান্ডে লাশ গায়েব (২০১০) বিধ্বংসী প্রচার ছিল। যেমন সাঁইবাড়ি হত্যা (১৯৭০) মরিচঝাঁপি (১৯৭৯), আনন্দমার্গী (১৯৮২) সংক্রান্ত অর্ধ-সত্য ও অসত্য মিথ্যাচার দক্ষিণপন্হী রাজনীতির হাতিয়ার। জ্ঞানেশ্বরী ও সাঁইথিয়া রেল দুর্ঘটনায় (২০১০) ব্যর্থতা ঢাকতে রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বিচারিতা কিংবদন্তী। দিপালী বসাক ধর্ষণের অজুহাত ও ২১শে জুলাই রাইটার্স অভিযান (১৯৯৩) থেকে বেদী ভবন তান্ডবে (১৯৯৮) মিডিয়ার বহুরূপী চরিত্র অবিস্মরণীয় (প্রথম পর্ব দেখুন)। পরবর্তী কালে চিটফান্ডে জড়িত সাংবাদিকরা কেউ সাংসদ হয়েছেন, কেউ নির্লজ্জের মত কারাগারে গেছেন। বাংলার একাংশ রাজনীতিবিদ ডাকাত, চটিচাটা নির্লজ্জ সংবাদ মাধ্যমও অনুঘটকের কাজ করে টু পাইস কামিয়ে নিয়েছে।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যদি ঢাকী হন, সংবাদ মাধ্যম কাঁসর। কেউ না পড়লে পিছিয়ে যায়, ভগবানকে ছাড়া মমতাকেও ভয় পায়, টেবিলের নিচে নিঃশব্দ লেনদেনের বিপ্লবে থাকে কেউ। বাংলার হায়না বংশীয় সাংবাদিকরা এতটা জড়িত যে কারাগারবাসেও চরিত্র বদলায়নি। কিছু ঘটনা ইতিহাস হয়ে গেছে- যেমন চম্পলা সর্দার। ভাঙ্গড়ের অশ্বথ্থবেড়িয়া গ্রামে পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী ছিলেন চম্পলা। তাঁর ছোট্ট ঘরে স্বামী ও সন্তানের সামনে থেকে তুলে নিয়ে পাঁচজনায় গণধর্ষণ করে। দিনটা ছিল ২৩শে মে, ১৯৯৮। পর দিন এগিয়ে থাকা, ভয় পাওয়া, নিঃশব্দ বিপ্লবীরা গণধর্ষণের হেডলাইন করল। ২৫শে মে গড়িয়াহাটে একটি বেসরকারী নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয় গ্রামের চম্পলাকে। মেডিকাল রিপোর্টে কোন আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেল না। সুযোগের সদ্ব্যবহার করে কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জর্জ ফার্নান্ডেজ মমতাকে বোনাস খুশী করতে ছুটে এলেন কলকাতায়। নির্বাচনে তৃণমূলের ভরাডুবির পর কলকাতার রাস্তায় ছেলের হাত ধরে একা চম্পলা সর্দার। লোকমুখে সে কাহিনী জীবিত। কাজের সময় কাজী, কাজ ফুরোলে কিষেণজী।

সুযোগ সন্ধানী জর্জ ফার্নান্ডেজের কফিন কেলেঙ্কারিকে সামনে রেখেই মমতা এনডিএ সরকারের সাথে বিশ্বাসঘতকতা করলেন। সাতগাছিয়ায় গলায় জ্যান্ত কই মাছ ঢুকিয়ে হত্যার গল্পও সেকালে বাজারে হিট করেছিল বেশ। মৃত বাবলু দলুইয়ের মা অবশ্য আদালতে জানান, গলায় কই মাছের কাটা আটকে ছেলের মৃত্যু হয়েছিল। ১৯৯৮সালের ৯ই জানুয়ারী, দক্ষিণপন্হীদের আভ্যন্তরীন দ্বন্দ্বে মৃত্যু হয় সুজাতা দাসের। ধর্ষণ ও খুন নিয়ে সংবাদ মাধ্যম মুখর হয়েছিল। মানবাধিকার কমিশনের দুই সদস্যকে দিল্লী থেকে নিয়ে এসেছিলেন। বর্তমানে মানবাধিকার বা মহিলা কমিশনের সদস্যরা দিল্লী থেকে এলে তুমুল বিরোধিতা করেন মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী। ২০০০ সালের ১লা এপ্রিল নোয়াপাড়ার তৃণমূল কাউন্সিলার বিকাশ বসুর খুনে আঙুল ওঠে গোপাল ও অর্জুন সিংদের বিরুদ্ধে। পুরুলিয়ায় বসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিপিএমের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলতে মিডিয়া গর্জন করে ওঠে। সেই অর্জুন সিংরা বহুবার দলবদল করে বর্তমানে পদ্মশিবিরে। অর্জুন সিংদের সাথে বাংলার মিডায়ার চরিত্রগত কোন ফারাক নেই। মিডিয়ার দুই ভাগ- গোদি ও দিদি।

দাসপুরের গৌড় খাঁড়া কোন রাজনৈতিক দলের কর্মী ছিলেন না। লোকসভা নির্বাচনে দেওয়াল লিখনকে কেন্দ্র করে যুযুধান পার্টির সমস্যা মেটাতে যান গৌড়। তিনি আহত হন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভাইকে চাকরির প্রলোভন দিয়ে কলকাতায় ডাঃ কাশেমের নার্সিংহোমে নিয়ে আসেন গৌড়কে। ওখানেই জিভের একাংশ বাদ দেওয়া হয় গৌড়ের। সংবাদ মাধ্যমে খবর ছড়িয়ে যায়, সিপিএম গৌড়ের জিভ কেটে নিয়েছে। এগিয়ে থাকা কাগজের সাংবাদিক তখন কেশপুরের খুনী সন্ত্রাসীদের ক্ষুদিরাম বসুর সাথে তুলনা করছেন। সেই সাংবাদিক এখনও হাফপ্যান্ট পরে স্পেনের রাস্তায় নেত্রীর পেছনে ছুটে বেড়ান। ২০০১ সালের ৩রা জানুয়ারি কেশপুরে মমতার পায়ে আঘাতের গল্প। আনন্দবাজার পত্রিকা, প্রতিদিন, বর্তমান, টাইমস অব ইন্ডিয়া, মুকুল রায়, সুব্রত মুখার্জী, আকবর আলি খোন্দাকার, অজিত পাঁজার পরষ্পর বিরোধী বক্তব্যে নরক গুলজার। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক অনিল বিশ্বাসের মেডিকাল বোর্ডের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বাংলা বন্ধের পথে হাঁটেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এরকম সহস্র তমসাচ্ছন্ন রাত কেটেছে।

এই সময়ে মাওবাদী, জনযুদ্ধ গোষ্ঠী, এপিডিআর, লিবারেশন, এসইউসিআই, পিডিএস, জঙ্গলমহলের জীবন জীবিকা সংক্রান্ত কিছু ছত্রধর কমিটি তৃণমূলের শাখা সংগঠনের মত রাজনৈতিক ভাবে মমতাকে মদত দিতে থাকে। শহর থেকে পারফিউম মেখে সেনসেক্স বাড়াতে নিরপেক্ষ সেন বাবু-বিবি মাথায় কালো ফেট্টি বেঁধে যেতেন পাকুড় গাছের তলে। অনেকেই পরে নিরপেক্ষতার মেকআপ তুলে চুলে ঘাস লাগিয়ে নিয়েছেন। বাকিরা মাসোহারা, পুরষ্কারে তুষ্ট। ২০০৯ সালের ১১ই জুন বামকর্মী সোলকু সোরেনকে হত্যা করে সৎকার করতে দেওয়া হয়নি। মিডিয়ার উল্লাস ছিল চোখে পড়ার মত। ছোট আঙারিয়ার মত বহু গ্রামে রাতের আঁধারে জনযুদ্ধ গোষ্ঠীর বৈঠক হত। জমা হত প্রচুর অস্ত্র ও বিস্ফোরক। তেমনই এক দুর্ঘটনা ছোট আঙারিয়ায় ২০০১ সালের ৪ঠা জানুয়ারী। সংবাদ মাধ্যম হাওয়ার চেয়ে আগে আগুন ছড়িয়ে দিতে সচেষ্ট ছিল। প্রকাশিত হল দুটি ট্রাকে মৃতদেহ সরিয়ে ফেলার অবান্তর গল্প। বক্তারকে কলকাতায় এনে বেশ কিছু দিন ভবানীপুর অঞ্চলে যাত্রাপালা প্রদর্শিত হবার পর খিদের জ্বালায় বক্তার কলকাতা ছাড়েন।

২০০৭ সালের ২১শে সেপ্টেম্বর ভিনধর্মী যুবক যুবতীর প্রেমজ বিবাহের করুণ পরিণতি ঘটে। ঘটনার সাথে সরকারের কোন সম্পর্ক ছিল না। রিজওয়ানুর রহমানের আত্মহত্যাকে পুঁজি করে রাজনৈতিক ও মিডিয়ার ব্যবসায়ীরা স্বার্থ সিদ্ধিতে নেমে পড়েন। সংখ্যালঘু মহল্লায় সান্ধ্য মজলিশে তথাকথিত সরকার বিরোধী সুশীলরা সাম্প্রদায়িক বিষ ছড়াতে শুরু করেন। এমনকি হতভাগ্য যুবকের পরিবার আজও সেই মৃত্যুর ফায়দা তুলে যাচ্ছেন। এমনকি রেলমন্ত্রী হবার পর যুবকের বৃদ্ধা মাকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলের সুরক্ষা কমিটিতে অন্তর্ভূক্ত করে নিয়মিত রোজগার নিশ্চিত করেন। আজও করমন্ডল থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনায় জনগন সেই হঠকারিতার মূল্য দিচ্ছেন। অশোক টোডিদের বিরুদ্ধে হত্যার ষড়যন্ত্রের আঙুল তুললেও, তিনি পরে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করেন। তথাকথিত আক্রমণকারী ও আক্রান্তরা সব একই ঘাটে রাজনৈতিক দুধ পান করতে কসুর করেননি। সেদিনের কাঁপা কাঁপা কন্ঠে সঞ্চালকের কোলাহলে বহু কোটি টাকা কামিয়ে নিয়েছে মিডিয়া জগৎ, আর মমতা লুঠেছেন সাম্প্রদায়িক হলাহল।

আজ গ্রেপ্তার হওয়া বালু-প্রিয় শঙ্কর আঢ্য বনগাঁর কাউন্সিলার তাপস মিত্রকে খুন করতে সুপারি দেন। এরা দীর্ঘ দিনের পাপী। ২০০৯ সালের ২২শে সেপ্টেম্বর সোনাচূড়ায় তৃণমূল পঞ্চায়েত প্রধান নিশিকান্ত মন্ডলকে রাজার মত ঔদ্ধত্যের অপরাধে খুন করে মাওবাদীরা। কিষেণজী লিফলেটে স্বীকার করলেও তৃণমূল, শুভেন্দু অধিকারী ও সংবাদ মাধ্যম সিপিএমকে দায়ী করে শুরু করেন হত্যালীলা। লাশ গায়েবের অভিযোগ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বহুবার করেছেন। কখনও প্রমাণ করতে পারেননি। হাইড রোডে বিষমদ ১৪জনের মৃত্যুতে সেই খেলা ছিল মমতার। তাঁর রাজত্বকালে বিষমদে মৃতদের মূল্য বেড়ে হয়েছিল ২লক্ষ টাকা। ২০১০ সালের ১২ই জানুয়ারী, বাসন্তী কলোনির ৪৫০টি বাড়ি পুড়ে ছারখার হয়ে যায়। দমকল এবং মিডিয়া অকুস্হলে পৌঁছাতে পারেনি তৃণমূলের অবরোধ কর্মসূচীর ফলে। সেখানে মিঠুন চক্রবর্তীর সাথে রেলমন্ত্রী থ্যালাসেমিয়া হাসপাতালের শিলান্যাস করেছিলেন। সেই বস্তী পুড়ে মাঠ হয়ে গেছে, কিন্তু হাসপাতাল বা মিঠুন আজ নেই। সেখানে গগনচুম্বী অট্টালিকার সারি। এই ভাবেই ইতিহাস বদলে যায়।

২২শে অগাষ্ট, ২০১০, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে খুনের চেষ্টা হয়েছে’ লুম্পেনরা প্রচার করবে বলে মমতার কনভয়ে ভুল করে ঢুকে যাওয়া পাঞ্জাব প্রদেশের গরীব ড্রাইভার গুর্জর সিংকে যার পর নাই হেনস্হার শিকার হতে হয়। পরবর্তীকালে তাঁর উত্তরসূরী ভাইপোর কনভয়ে এক পাঞ্জাবী ড্রাইভার ঢুকে পড়তেও একই হাল হয়েছিল। যে সকল দুষ্কৃতিরা মমতার অনুপ্রেরণায় পেশা বজায় রাখে, তাদের নেত্রীর খুন হয়ে যাবার ভয় দেখালেই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। যতদিন টালিগঞ্জ থেকে গড়িয়ার মেট্রো চলবে, মানুষ মনে রাখবে মমতার কলঙ্কময় ইতিহাসের কথা। ১৯৯৮ সালে টালিগঞ্জ থেকে বর্ধিত পথে মেট্রো চালুর সময়ে রেলমন্ত্রী নীতিশ কুমারের সাথে রাজ্য সরকারের এক-তৃতীয়াংশ খরচ বহনের চুক্তি হয়। সেই অনুসারে চলছিল। যদিও টালি নালার উচ্ছেদ রুখতে মমতা নিজ দলের মেয়র সুব্রতর সাথেও বিবাদ করেছেন। গড়িয়ায় উচ্ছেদ বিরোধী আন্দোলন করেছেন। দশ বছর পর মমতা রেলমন্ত্রী হয়ে সম্পূর্ণ কৃতিত্ব দাবী করে রাজ্য সরকারাকে অন্ধকারে রেখে অসম্পূর্ণ প্রোজেক্টের উদ্বোধন করে রাজনৈতিক ফায়দা তোলেন।

বহুবর্ণের রাজনৈতিক চরিত্র যে চিটফান্ড, নারদ, নিয়োগ দুর্নীতি, কয়লা-গরু-বালি-মাটি পাচার, রেশন কেলেঙ্কারিতে যুক্ত হবেন, তাতে আশ্চর্যের কিছু নেই। কেন্দ্রে নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদীর মত পরম বন্ধুর সহায়তায় ঘাসফুল আজ পল্লবিত। মোদীর শাসনামলে দশ বছরে কোন দুর্নীতির তদন্ত শেষ হয়নি, এবং জীবদ্দশায় তেমন দুর্ঘটনার সম্ভাবনাও ক্ষীণ। দ্বিতীয়তঃ ইলেক্টোরাল বন্ডের মত দুর্নীতির পর্দাফাঁস হতে দুই তস্করের বন্ডিং, মতান্তরে সেটিং সম্পর্কে সন্দেহের অবকাশ নেই। আজ যিনি বন্ধু, কাল ঘোর শত্রু। কাল যিনি শত্রু ছিলেন, আর গলার বন্ধু। কেবল বামপন্হীরা সম দূরত্বে বহাল আছে। ১৯৯৬ সালে তিনি প্রকাশ্য দিবালোকে জনসমক্ষে গলায় দড়ি দিয়েছিলেন। সুলতান আহমেদ, মৃণাল সিংহ রায় থেকে শঙ্কর সিংদের মত দুষ্কৃতিদের নির্বাচনে টিকিট দিয়েছিল বলে। ২০০১ সালে শঙ্কর সিংর সাথে এক মঞ্চে ছিলেন মমতা ও সনিয়া। ২০২৪এর লোকসভা নির্বাচনের টিকিট পেয়েছেন সুলতান আহমেদের স্ত্রী। সুবোতোদা, সোমেনদা বা শিশিরদার সাথে কভি খুশী কভি গম। সুব্রত বলেন, বাজার করো ঘুরে, মমতার থেকে দূরে।  

এত সংবাদ মাধ্যম আছে, কেউ গবেষণা করে জানাতে পারেনি, ৩৪ বছরের বামামলে কতজন তৃণবীর শহীদ হয়েছেন। আজও যে কোন দুষ্কৃতি নথি ছাড়া যে কোন সংখ্যা আউড়ে যায়। কখনও ৮৫, বা ৫০০ কিংবা পার্থ রচিত ৫৫,০০০। কখনও সুন্দরবনের খাঁড়ি লাল হয়ে গেছে, কখনও হলদি নদী। কখনও লরি ভর্তি লাশ পাচারের পিসিমার ঝুলির গল্প। পার্থবাবু প্রিয়তমার খাটের তলায় সঞ্চিত অর্থের সঠিক হিসাব দিতে পেরেছেন? খাটের তলার হিসাব রাখেন না, তিনি দিচ্ছেন আগরতলার পঞ্জিকা। নন্দীগ্রামের ১৪ জনের নামের তালিকা ঠিক নেই। দলনেত্রী বলছেন, অধিকারী পরিবারের অঙ্গুলী হেলনে হত্যা করা হয়। ৮৫ জনের তালিকায় এমন বহু নাম আছে যাদের নন্দীগ্রামের মত হত্যাকারী তৃণমূল। ২০০৯ সালে মৃত আমিরুল ইসলাম তেমন একজন। সেই তৃণমূল কর্মীকে গুলি করে হত্যা করে আরাবুল ইসলামের ভাই ক্ষুদে ও গফফর। মধ্যমগ্রামের অভিজিৎ সাহা খুন হন তৃণমূল কর্মী রাহুল ও শম্ভূ অধিকারীর হাতে। অভিজিতের দাদা সন্তোষ সাহা কোন তৃণমূল নেতাকে মাল্যদান করতে দেননি। মিডিয়া সংখ্যা জানে না?

মৃত্যুই ভবিতব্য। বুড়িশোলের জঙ্গলে কিষেণজী মমতাকে মুখ্যমন্ত্রী দেখতে চাওয়ার ঋণ রক্তে শোধ করে গেছেন। হত্যাকারীর নামও ভাইপো উল্লেখ করেছিলেন। অথচ মিডিয়া এত গল্প জানে না। যখন যে ঢাক বাজে, মুজরো পেলে ঘুঙুর পরে নেচে নেয় বা রূদালীর মত কাঁদে। ১৯৬২তে জ্যোতি বসুকে দেশদ্রোহী বলা বাজারী পত্রিকা মৃত্যুতে দেশনায়কও বলেছে। নেত্রী চেয়ে দ্রুত রঙ বদল করেই অভিযোজিত হয়ে বেঁচে আছে গিরগিটিরা। যে লালু আলমের আঘাতে রাজনীতি তপ্ত করে তুলেছেন, সেই লালু আলম তৃণমূলে। উল্লিখিত ঘটনাগুলি ক্ষমতারোহণের পূর্বরাগ মাত্র। চালচিত্র অঙ্কনে বাংলার মিডিয়া মীরজাফরের মুন্সিয়ানায় দাসত্ব দেখিয়েছে। সকল কাহিনী নথিভুক্ত করলে আরেকটি রামায়ণ বা মহাভারত হয়ে যাবে। অনেক তথাকথিত সাংবাদিকের মুখের তার্পিন তেল খসে খড় বেরিয়ে পড়বে। আদর্শগত ভাবে বাম বিরোধিতা করা আর মিথ্যাচারের বেসাতি এক নয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর জীবনালেখ্য, ছবি, ছড়া, কবিতা, বিপুল পুস্তকরাজিতে যে ঠগী চরিত্র এঁকে গেলেন, তার প্রচ্ছদ ও বাঁধাইয়ের দায় সংবাদ মাধ্যমের।